যারা ভেষজ জিনিস নিয়ে কাজ করেন , তাদের অনেক উপাদানের প্রয়োজন হয়। তেমনি একটি উপাদানের নাম তেজপাতা। প্রাচীন যুগ থেকেই এর ব্যবহার হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদ থেকে জানা যায় , কেবল তেজপাতা খাওয়াতেই নয় , পোড়ালেও কিন্তু উপকার পাওয়া যায় ।একটি হেলথ ওয়েবসাইট “হেলদি ফুড ট্রিক্স” এর সম্প্রতি বলা হয়েছে – একটি পাত্রে কয়েকটি তেজপাতা নিয়ে দশ মিনিট ধরে পোড়ালে ,যেমন তেজপাতা পুড়ে যাবে তেমনি পুড়ে যাবে এর মধ্যে থাকা অপরিহার্য তৈল-উপাদনও ।এতে ঘরে একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে ,এই ভেষজ গন্ধ শরীর ও মনকে সতেজ করে দেবে তেমনি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমবে ।বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন ,তেজপাতার মধ্যে রয়েছে পিনেনে ও সাইনিয়ল নামে দুটি উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে সাইকো একটিভ পদার্থ । পাশাপাশি এতে রয়েছে জীবাণুনাশক ডিউরেটিক সিডেটিভ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। মেজাজ কে ভালো করে ,সঙ্গে তেজপাতা পাকস্থলীর ফ্লু নিরাময়ের সাহায্য করে। তেজপাতার এসেন্সিয়াল অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা কমে। ইউরোপীয় বিভিন্ন শাস্ত্রে বলা হয়েছে , প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা তেজপাতা কে পবিত্র ওষুধ বলতো ।উপমহাদেশে এই পাতাকে মসলা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। রান্নার স্বাদ বাড়াতে ও সুগন্ধ আনতে এর ব্যবহার করা হয় । প্রাচীন গ্রিকে ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরিতে তেজপাতার ব্যাপক ব্যবহার করা হয় ।
চুলের যত্নে তেজ পাতার উপকারিতা:
কয়েকটি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে নিন। জলটা ঠান্ডা করে নিন। শ্যাম্পু করার পর চুল ধুয়ে নিন । মাথার ত্বক চুলকাচ্ছে ?তেজপাতা বেটে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে স্কাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন ।তেজ পাতার নির্যাস মাথার তালুর অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং চুলের গ্রন্থি কোষগুলোতে বাড়তি শক্তির যোগান দেয় । ফলে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয় । তেজপাতার পানি ব্যবহারে কিছুক্ষণ পর অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তেজপাতার গুরুত্ব:
গবেষণায় দেখা যায় -দিনে দুবার তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে। তেজপাতায় থাকা উপাদান ইনসুলিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখে। টাইপ -টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও এই পাতা বেশ উপকারী।
হজমে বা অরুচিতে তেজপাতার উপকারিতা:
কোষ্ঠকাঠিন্যে তেজপাতা স্বাভাবিক হজম শক্তি ফিরিয়ে আনবে । এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় ।অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা কমায় ও হজম রস তৈরিতে সাহায্য করে ।তেজপাতায় থাকা এনজাইম দ্রুত খাবার ভাঙতে পারে ফলে অন্ত্রের সমস্যা দূর হয় ।
হার্টের সুরক্ষায় তেজপাতা:
এই পাতায় রয়েছে রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদান গুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে ও কোলেস্টোরেল এর মাত্রা কমিয়ে দেয় ।
ব্যথা কমাতে তেজপাতার গুরুত্ব:
তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে ।মাথাব্যাথা ,জয়েন্টে ব্যথা ও বাতের ব্যথা কমাতেও তেজপাতা ও ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে পেস্ট করে আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলে ব্যথা কমে যাবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে তেজপাতার গুরুত্ব:
এতে ফাইটো নিউট্রিয়ানস ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ক্ষত সারাতে তেজপাতার উপকারিতা:
এই পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুন ভাবে কাজ করে ,ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমনের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে ।
গলায় খুসখুসে কাশি উপশমে তেজপাতার গুন
এই পাতা ব্যাকটেরিয়া তারাতে চমৎকারভাবে কাজ করে। রং চা বা গরম পানিতে এই পাতার সিদ্ধ করে গরম গরম খেলে উপকার পাবেন । আবার কুসুম গরম থাকতে একটি পরিষ্কার কাপড় এই পানিতে ভিজিয়ে বুক মুছে নিন ,কয়েকবার এটি করুন – খেয়াল করবেন পানি যেন বেশি গরম না থাকে ।
কিডনির সমস্যা প্রতিরোধে তেজপাতার গুন:
তেজপাতা শরীরে ইউরিয়া কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ইউরিয়া বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে।
স্ট্রেচ বা উদ্বিগ্নতা চাপ কমাতে তেজপাতার গুরুত্ব:
যদি দিনের শেষে আপনার মন মেজাজ ভালো না লাগে তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে দেখতে পারেন । এটি আপনার স্নায়ু শান্ত করে ও উদ্বিগ্নতা কমায় । এমন কি ভাল ঘুমের জন্যও উপকারী ।
সতর্কতা:
পেট খারাপের সময় তেজপাতা না খাওয়াই ভালো । যেহেতু তেজপাতা হজম শক্তিতে সাহায্য করে তাই পেট খারাপের সময় তেজপাতা না খেলে ভালো হবে ।তেজপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ,ফলে যারা ওষুধ খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের জন্য তেজপাতা কম খাওয়াই ভালো। গর্ভাবস্থায় তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয় এর কারণ হলো তেজপাতা শরীরকে উষ্ণ করে দেয় যা মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্য হানিকর হতে পারে । এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ঘাম ,ডায়রিয়া ,বেশি প্রস্রাব হওয়ার মতো সমস্যা থাকায় এটি আরো সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে ।এছাড়াও সার্জারি রোগীদের দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয় ।
শরীর ও চুলের যত্নে তেজ পাতার উপকারিতা সম্পর্কে Health Fit Into.com তেজপাতার ১০ তেজী গুন সম্পর্কে আপনাদেরকে জানিয়ে দিল ।আপনাদের সুস্থতাই একান্ত কাম্য ।ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ ।
তুলসী( বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum Sanctum) একটি ঔষধি গাছ । তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী…
শীতকালে ত্বকের অনেক সমস্যা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পা ফাটা / এটা যেমন কষ্টকর…